Tuesday, November 18, 2025

তালায় ৭০ বছর ধরে মাদুর বিক্রয় করছেন শত বছরের সুনীল মন্ডল

Must read

 

তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চলের তালা উপজেলার এক প্রাচীনতম মাদুর শিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে। কাঁচামাল সংকট এবং বাজারে কাক্ষিত দাম না পাওয়ায় শিল্পীরা এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। জেলার ঐতিহ্যবাহী এই কুটির শিল্পটি অচিরেই বিলুপ্ত হতে চললেও খোঁজ পাওয়া গিয়েছে এমন এক ব্যক্তির যিনি দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে তালা উপজেলা জুড়ে মাদুর বিক্রয় করছেন।

বলছি তালা উপজেলার মাদরা গ্রামের স্বর্গীয় হরেন মন্ডলের পুত্র সুনীল মন্ডলের কথা। তার বয়স এখন ১০৬ এসে ঠেকলেও যুবক বয়সের মতন উপজেলার জুড়ে মাদুর বিক্রয় করছেন তিনি। এই উপজেলার অনেক বছরের পুরনো মাদুর শিল্প। এ অঞ্চলের ২ থেকে ৩’শ পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস ছিলো এ মাদুর শিল্প। কিন্তু কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মাদুর শিল্প বর্তমানে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কালের বির্বতনে সেই প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এই কুটির শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এখনও কুটির শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে মাদরা গ্রামটিতে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মাত্র দুই-একটি পরিবার।তাদের মধ্য অন্যতম হলেন স্বর্গীয় হরেন মন্ডলের পুত্র সুনীল মন্ডল।

তথ্যমতে, এখনও গ্রামাঞ্চলের বাড়ীতে অতিথি এলে মাদুর পেতে বসতে দিয়ে আপয়াণ করা হয়। তবে শহরে ধনী পরিবারেও অনেক সময় কারুকার্যশোভিত মাদুরের দেখা মেলে। ম্যালের তৈরী মাদুর গরমে দিনে আরাম দায়ক এবং স্বাস্থ্যসম্মত। তীব্র গরমে শীরের ঘাঁম শুষে মাদুর দেহ শীতল করে। আর গ্রামের অতিথিরা মাদুরে শুয়ে প্রকৃতির হাওয়ার আরামদায়ক ঘুম উপভোগ করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাদুর শিল্পে ভাঁটা পড়ে। মাদুর শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল মেলে একসময় পতিত জমিতে প্রচুর পাওয়া যেত। বর্তমানে ম্যালের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। মেলে জন্মে ছোট ছোট জলাশয়ে, খাল বিলে এবং নদীর চরে। বর্তমানে যে মেলে পাওয়া যাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।এছাড়াও প্লাস্টিক শিল্পের বিপ্লব, প্রয়োজনী উপকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতা না থাকায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ম্যালের তৈরী মাদুর।

মাদরা গ্রামের ১শত ৬ বছরের সুনীল মন্ডল জানান, তাদের গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের নারীরা/পুরুষরা মাদুর বুননের সঙ্গে যুক্তছিলো। কিন্তু এখন আর তেমন কেউ মাদুর তৈরি/ বিক্রয় করে না। আমি প্রায় ৭০ বছর ধরে মাদুর বিক্রয় করি । আমার ২ পুত্র সন্তান ও ১ কন্যা সন্তান আছে। বড় ছেলে ব্যবসা করে, ছোট ছেলে মাছ চাষ করে।
আপনি এখনো কেন মাদুর বিক্রয় করেন এমন প্রশ্ন করা হলে সুনীল বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদার পেশা। ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারি না। তাই সকাল হলে মাদরা গ্রাম থেকে প্রায় ৭-৮ কি:মি পথ পারি দিয়ে তালায় হেটে আসি। যদি মাদুর বিক্রয় হয় ভালো, না হলে আবার বাড়ি ফিরে যায় ।

অন্যরা কেন মাদুর বিক্রয় ছেড়ে দিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও প্রতি কাউন মেলের দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ফলে এক জোড়া মাঝারি ধরনের মাদুর উৎপাদনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ বাজারে এ মাদুরের প্রতি জোড়ার পাইকারি দাম ৮০০ টাকা। এতে এক জোড়া মাদুরে ২০ থেকে ৩০ টাকার বেশি লাভ থাকছে না। ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আধুনিক প্লাষ্টিক শিল্পের আধিক্যে চাহিদা কম অন্যদিকে একটি মাদুর তৈরিতে যে পরিমাণ খরচ হয় বাজারে ঠিক সে পরিমাণ দাম পাওয়া যায় না। তাই এ ব্যবসা আর কেউ করতে চায় না।

এলাকায় একসময় মাদুর বিক্রয়ের সাথে জড়িত ছিলেন তারা বলেন,প্রায় ২শত বছর পূর্বে আমাদের দাদা তার দাদা এই মাদুর শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। আমার পিতাও এই পেশায় জড়িত ছিলেন। বর্তমানে মাদুর তৈরী করতে ম্যালের দাম আকাশ ছোঁয়া। তাই কাঁচামাল সংকট এবং বাজারে কাক্ষিত দাম না পাওয়ায় প্রাচীনতম মাদুর শিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে। সরকার এই কুটির জন্য ভূতর্কি প্রদান পূর্বক শিল্পটি যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতেন তাহলে আমাদের অনেকে এই পেশায় পুনরায় ফিরে আসতেন।

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article