দক্ষিন বাংলা ডেস্ক : নানিকে দেখতে রংপুর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বেড়াতে এসেছিল সাদিয়া আক্তার (১১) ও সাদ্দাম হোসেন (৬)। কিন্তু কারো কল্পনাতেও ছিল না, এ বেড়ানোই হবে তাদের জীবনের শেষ।
আজ ১২ জুন ২০২৫ রোজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবারের সঙ্গে নদীতে গোসল করতে নেমে পানির স্রোতে নিখোঁজ হয় দুই ভাইবোন। বিকালে বোন সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করা গেলেও ছোট ভাই সাদ্দাম এখনো নিখোঁজ।
হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ও আমগাঁও ইউনিয়নের মাঝামাঝি ‘সুইচগেট’ নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হরিপুর থানার ওসি জাকারিয়া মণ্ডল।
নিহত দুই শিশুর বাবা আমিনুল ইসলাম রংপুর জেলার পশুরাম থানার জলছত্র গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জানান, দুদিন আগে আমার দুই সন্তানকে নিয়ে শাশুড়িকে দেখতে হরিপুরের আমগাঁও গ্রামে এসেছিলাম। দুপুরে তীব্র গরম পড়ায় নাগর নদীতে গোসল করতে যাই। হঠাৎ দেখি সাদিয়া আর সাদ্দাম পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। আমি চেষ্টা করেও ওদের ধরতে পারলাম না।
ঘটনার সময় তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। প্রায় দুই ঘণ্টার খোঁজাখুঁজির পর বিকাল ৪টার দিকে নাগর নদীর মানিকখাড়ি এলাকা থেকে সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তার ছোট ভাই সাদ্দামকে এখনো পাওয়া যায়নি।
নদীর তীরে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে আমিনুল বলছিলেন, আমি কী করে স্ত্রীর মুখোমুখি হবো! দুইটা সন্তান নিয়ে এলাম, ফিরবো একজনের লাশ নিয়ে আরেকজনকে ছাড়াই।
শিশুদের নানি আছমা বেগম বলেন, সাদিয়া কত আবদার করে বলছিল, নানি, আমি তোর সঙ্গে থাকবো। কে জানতো, এই বলাই শেষ কথা হবে!
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, সুইচগেট এলাকাটি গভীর ও বিপজ্জনক। প্রতিবছরই এখানে কেউ না কেউ ডুবে যায়। অথচ এখানে কোনো সতর্কতামূলক চিহ্ন বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।
অন্য একজন স্থানীয় দোকানদার আবদুল মালেক বলেন, আমরা দেখেছি তিনজন গোসল করছে, হঠাৎ করে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। তারপর নদীতে অনেক খোঁজাখুঁজি চলে। মেয়েটিকে পাওয়া গেল, ছেলেটিকে এখনো পাওয়া যায়নি।
হরিপুর থানার ওসি জাকারিয়া মণ্ডল জানান, নিহত এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যজনের লাশ উদ্ধারে রংপুর থেকে ডুবুরি দলকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে বলে জানানো হয়েছে।