Tuesday, November 18, 2025

রাত পোহালেই উদ্বোধন স্বপ্নের সেতু পদ্মা, দুর্ভোগ কমবে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

Must read

 

আ. রাজ্জাক শেখ : পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনা থেকে রাজধানীতে যেতে সময় কম লাগবে। ফেরিঘাটে আর অপেক্ষা করতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে সেই দুর্ভোগও আর থাকবে না। রপ্তানিকারকরা আগ্রহী হবে মোংলা বন্দরের প্রতি। ফলে আরও গতিশীল হবে বন্দরটি। আর এর সুবিধা পাবেন খুলনার চিংড়ি ও পাটশিল্প রপ্তানিকারকরা। এ ছাড়া খুলনা, মোংলা ও আশপাশে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান জানান, খুলনার মানুষ এখন সড়কপথে দৌলতদিয়া অথবা মাওয়া ঘাট দিয়ে বাসে রাজধানীতে যান। কিন্তু ফেরির জন্য ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। খুলনা থেকে রাজধানীতে যেতে সময় লাগে ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা। ঈদের সময়, শীতকালে কুয়াশায় কিংবা বৈরী আবহাওয়া থাকলে ফেরিঘাটের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। খুলনা থেকে ট্রেনে ঢাকায় যেতেও প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। তিনি জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনা থেকে বাসে ঢাকায় যেতে সময় লাগবে মাত্র চার ঘণ্টা। এর ফলে সময় কমার পাশাপাশি খুলনার মানুষের দুর্ভোগও কমে যাবে। এ ছাড়া খুলনা থেকে মাঝে মধ্যে গুর“তর রোগী অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিড়ম্বনা ছিল, তা আর থাকবে না।
আশরাফ উজ জামান বলেন, খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সবজি ঢাকায় পাঠাতে অনেক দেরি হতো। অনেক সময় রাস্তায় ট্রাকেই সবজি নষ্ট হয়ে যেত। সেই সমস্যাও নিরসন হবে।
বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা থেকে বেশিরভাগ বাস এখন যশোর ও দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকায় যায়। মাওয়া দিয়ে ঢাকায় যাওয়া বাসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল গফফার বিশ্বাস জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনার বেশিরভাগ মানুষই এই রুটে ঢাকায় যাওয়া-আসা করবে। সে কারণে মাওয়া রুটে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকা রুটে খুলনা থেকে বাসের সংখ্যা কমে যাবে।
মোংলা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় আগে মোংলা বন্দরের প্রতি রাজধানীর গার্মেন্টস মালিকরা আগ্রহী হতো না। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন পণ্য আমদানিকারকরাও চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতি ঝুঁকত।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানীর সঙ্গে মোংলার দূরত্ব কমে যাবে, যোগাযোগ সহজ ও সময় সাশ্রয় হবে। তখন রাজধানীর আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দরের প্রতি আগ্রহী হবে। মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দরে কাজের ক্ষেত্রে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য এরই মধ্যে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্রেনসহ আধুনিক বেশ কয়েকটি যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। নতুন করে জেটি তৈরি ও পশুর চ্যানেল ড্রেজিং করা হচ্ছে। ড্রেজিং সম্পন্ন হলে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ এই বন্দরের জেটি পর্যন্ত আসতে পারবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে বিদেশি জাহাজ আসে ৯৭০টি। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৭৭৬টি জাহাজ এসেছে। শিগগিরই এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হলে খুলনা অঞ্চলের অর্থনীতিও গতিশীল হবে। মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী জানান, বর্তমানে তাঁরা কাঁচা পাট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করেন। কিন্তু ফেরিঘাটের সমস্যার কারণে খুলনা থেকে কাঁচা পাট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি দুর্ভোগও কমবে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবীর জানান, তাঁরাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুলনা থেকে হিমায়িত চিংড়ি চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করেন। পদ্মা সেতু চালুর পর চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠাতে আগের বিড়ম্বনাগুলো নিরসন হবে।

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা, মোংলা ও আশপাশের এলাকায় নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে।

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article