Saturday, July 27, 2024

আইডিইবি সাতক্ষীরা জেলা নির্বাহী উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

Must read

 

নিজস্ব প্রতিনিধি : কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার স্বার্থে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিএসসি (পাস) কোর্সের সমমান মর্যাদা প্রদানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ অবিলম্বে বাস্তবায়ন, জাতীয় মেধার অপচয় রোধে প্রশাসন ক্যাডারে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সনদধারীদের প্রবেশ রোধ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাগত সমস্যাদি সমাধানের দাবিতে প্রতিবাদ সভা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রকৌশলীদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) সাতক্ষীরা জেলা নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ। আজ ১০ জুন ২০২৪ রোজ সোমবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আইডিইবি’র জেলা কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম এ জায়েদ বিন গফুর’র সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ও শিক্ষা মন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সহ-সভাপতি প্রকৌ. আবেদুর রহমান ও প্রকৌ. কামরুল আকতার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌ. কামরুজ্জামান শিমুল, কাউন্সিলর প্রকৌ. অধ্যক্ষ মো: রফিকুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক প্রকৌ. অনিমেষ দেব নাথ, প্রকৌ. ইন্সট্যাক্টর আব্দুল আলিম, প্রকৌ. রবিউল ইসলাম, প্রকৌ. ফারুক আহমেদ এবং সাতক্ষীরা সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর বাকাছাপ এর নেতৃবৃন্দ ।
বাংলাদেশ (আইডিইবি) সাতক্ষীরা জেলা নির্বাহী কমিটি স্মারকলিপিতে উল্ল্যেখ করেছেন যে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত ও বৈশ্বিক কর্মবাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে শিক্ষার মূল¯্রােতধারায় নিয়ে এসে এই শিক্ষায় ভর্তির হার ২০৩০ সালে ৩০% ও ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০-৬০% এ উন্নীতকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনার নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধকরণে বহুমাত্রিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আপনার নির্দেশে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ১৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিএসসি (পাস) কোর্সের সমমানের মর্যাদা প্রদান করার বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ দেয়ার জন্য ১০ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের পর ডিগ্রি প্রকৌশলী ও তাদের সংগঠনের পক্ষে বিরূপ প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে তারা উদ্ভট ও মুর্খদের কাজ বলেও মন্তব্য করেছে। যা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ও দেশপ্রেমবিবর্জিত মন্তব্য বলে আমরা মনে করি। তাদের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের যে অগ্রগতি ও জীবনমানে পরিবর্তন হয়েছে, সেখানে কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। এই কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রে ডেস্ক ও ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কাজ করে থাকেন। যেখানে ডিজাইন, প্ল্যানিং, গবেষণায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা ডেস্কে এবং এক্সিকিউশন, সুপারভিশন, অপারেশন, পরিচালক ও মেইনটেন্যান্স কাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ করে যাচ্ছেন। দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মকান্ডের ৮৫% কাজ এদেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ করে থাকেন। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন। আপনি সদয় অবগত আছেন যে, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারগণ উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণের পর ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মাধ্যমিক উত্তীর্ণের পর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করেন। এক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার একাডেমিক পার্থক্য মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের ২ বছর। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং উভয় শিক্ষাকে উচ্চ শিক্ষাভুক্ত বা টারশিয়ারী শিক্ষা হিসেবে গণ্য করেছেন। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উভয়েই ইঞ্জিনিয়ার, যা রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ বিএসসি (পাস) সমমান মর্যাদা পাওয়ার যোগ্যতা যৌক্তিকভাবেই রাখেন। কেননা, বিএসসি (পাস) কোর্সের গণিত, পদার্থ ও রসায়ন বিষয়গুলো ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সে বিদ্যমান এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর সাথে ইন্টার লিংক রয়েছে। এছাড়া বিএসসি (পাস) কোর্সের মোট কন্ট্রাক্ট আওয়ার ও মোট ক্রেডিট আওয়ার-এর তুলনায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মোট ক্রেডিট ও মোট কন্ট্রাক্ট আওয়ার বেশী।
বাংলাদেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটি এসএসসি পাস শিক্ষার্থীদের জন্য ৪বছর অর্থাৎ ৮ সেমিস্টার, এইচএসসি (বিজ্ঞান) শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ বছর বা ৬ সেমিস্টার এবং এইচএসসি ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য ২ বছর ৬ মাস বা ৫ সেমিস্টার। এই প্রোগ্রামে ন্যূনতম স্কুলিং ১৪ বছর। এইচএসসি ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের স্কুলিং ১৪ বছর ৬ মাস এবং এইচএসসি (বিজ্ঞান) শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫ বছর। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে ডিগ্রি প্রোগ্রামের ইয়ার অব স্কুলিং সর্বনিম্ন ১৪ বছর (ফাস্ট ট্রাক ডিগ্রি)। পৃথিবীর অনেক দেশেই ডিগ্রি অর্জনের জন্য ১৪ বছর স্কুলিং বিদ্যমান। তাই সকল দিক বিবেচনায় বিশেষ করে একাডেমিক বিষয় বিবেচনায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিএসসি (পাস) কোর্সের সমমান মর্যাদা প্রদানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সময়োপযোগী বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাসের পর কোন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই বলে দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ মনে করে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে স্নাতক ডিগ্রি ১৪ বছর ইয়ার অব স্কুলিং এর পর প্রদান করা হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষেত্র বিশেষে কর্মাভিজ্ঞতাকে ডিগ্রি অর্জনে ক্রেডিট হিসেবে ধরে ডিগ্রী প্রদান করে।
আমরা মনে করি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিএসসি (পাস) সমমানের মর্যাদা প্রদান করা হলে আরও ভালো পেশাদার সুযোগে রূপান্তরিত হবে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যেখানে প্রতিটি গ্রেডে জ্ঞান ও দক্ষতা মূল্যবান হবে। এই সমতা আমাদের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য জ্ঞানের অসংখ্য দরজা খুলে দেবে। এটা করা হলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মর্যাদা ও গুরুত্ব বেড়ে যাবে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ও আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ন্যায্য পেশাগত সমস্যাদি দীর্ঘ একযুগেও বাস্তবায়ন হয় নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায়, যখন এদেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ চরমভাবে সংক্ষুব্ধ, ঠিক সেই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবমুখী উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ডিগ্রি প্রকৌশলী ও তাদের সংগঠন আইইবি ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনাপূর্বক নিম্নোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরী উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক এ শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার স্বার্থে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএসসি (পাস) কোর্সের সমমান মর্যাদা প্রদানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় মেধার অপচয় রোধ ও প্রশাসনে শ্রেণী স্বার্থ দ্বন্দ্ব নিরসনে এবং রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় রোধে প্রশাসনিক ক্যাডারে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সনদধারীদের প্রবেশ রোধে পেশা পরিবর্তনের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় আইনি কাঠামোর মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদোন্নতির কোটা ৫০% এ উন্নীতকরণ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক নিযুক্তিতে অন্যান্য পেশাজীবীদের ন্যায় একটি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট এবং পরিকল্পনা ও নকশা বিভাগে কর্মরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলীদেরকে সহকারী প্রকৌশলীদের ন্যায় ৩টি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদান, বিএনবিসি-২০২০ এবং ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করা, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণদের ক্রেডিট ওয়েভার দিয়ে ২ বছরে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করার সুযোগ প্রদান এবং প্রাইভেট সেক্টরে কর্মরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মর্যাদাকর বেতন ও পদবী প্রদানসহ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের ৪ দফা দাবী অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকৃষ্ট করার জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বিএসসি (পাস) সমমান মর্যাদা প্রদানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article