Friday, June 27, 2025

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

Must read

 

দক্ষিন বাংলা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আবার হোয়াইট হাউজে ফিরলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে আজ ২০ জানুয়ারি ২০২৫ রোজ সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। এরপর আগামী ৪ বছরের কর্মস্থল ও বাসস্থান হোয়াইট হাউজে চলে যান ট্রাম্প। এদিকে ক্ষমতা নেওয়ার এক দিন আগে রোববার ওয়াশিংটনে এক সমাবেশে ট্রাম্প হাজার হাজার সমর্থকের উদ্দেশে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করবেন। নির্বাচনি প্রচারণার সময় দেওয়া এই মূল প্রতিশ্রুতি তিনি দ্রুত পূরণ করার অঙ্গীকার করেন। খবর রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি, আলজাজিরার।

প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের শপথ উপলক্ষ্যে সোমবার ওয়াশিংটনের সর্বত্রই ছিল সাজসাজ রব। নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল পুরো শহর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২৫ হাজার সদস্য এ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পালন করেন। ৪ বছর পরপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের আয়োজন খোলা স্থানেই করা হয়। কিন্তু তীব্র ঠান্ডার কারণে কংগ্রেস ভবনের ভেতরে এবার অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দ্বিতীয়বারের মতো কংগ্রেস ভবনের রোটুন্ডায় করা হয় পুরো আয়োজন। ভয়াবহ ঠান্ডার কারণে এমনটি করা হচ্ছে বলে শুক্রবার ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন। কংগ্রেস ভবনের ভেতরে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবার বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হওয়ার সুযোগ ছিল না। সেখানে মাত্র ২০ হাজার অতিথির বসার স্থান রয়েছে। যারা ভেতরে ঢোকার টিকিট পাননি, তারা ন্যাশনাল মলে বড় স্ক্রিনে অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করেছেন। শপথের পর ট্রাম্প ক্যাপিটল থেকে হোয়াইট হাউজে একটি জমকালো প্যারেডের মাধ্যমে যাত্রা করেন। ট্রাম্পের সম্মানে ক্যাপিটল রোটুন্ডায় কুচকাওয়াজও আয়োজন করা হয়। এর আগে ১৯৮৫ সালে ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান। গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের পর ১২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরাজয়ের পর দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফিরলেন।

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি : ট্রাম্পের এই শপথ অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি জগতের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের উপস্থিতি ছিল বড় চমক। ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ এবং টিকটকের প্রধান নির্বাহী শৌ চিউসহ আরও অনেকে এই অনুষ্ঠানে ভিআইপি আসনে ছিলেন। বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামাও উপস্থিত ছিলেন। অন্য প্রেসিডেন্টদের স্ত্রীরা উপস্থিত থাকলেও মিশেল ওবামা অনুষ্ঠানে ছিলেন না। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রথাগতভাবে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো না হলেও ট্রাম্প ইতালি ও হাঙ্গেরির ডানপন্থি নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ভিক্টর অরবান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেই এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে।

ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার : এদিকে রোববার ওয়াশিংটন ডিসির ওয়ান এরিনাতে আয়োজিত ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বিজয় সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘কাল সূর্যাস্তের সময় থেকে আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ থামবে।’

৭৮ বছর বয়সি রিপাবলিকান নেতা সমর্থকদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তিনি হোয়াইট হাউজে ফিরে প্রথম দিন থেকেই ‘দ্রুততার’ সঙ্গে কাজ শুরু করবেন। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) দুপুরে আমেরিকার ক্ষয়িষ্ণু প্রভাবের ৪ বছরের পর্দা নামবে এবং আমরা আমেরিকার শক্তি ও সমৃদ্ধির একটি নতুন দিন শুরু করব। আমি অভাবনীয় দ্রুততা ও শক্তির সঙ্গে কাজ করব এবং আমাদের দেশের প্রতিটি সমস্যা সমাধান করব।’ তিনি বলেন, এবার চিরতরে আমরা ওয়াশিংটন থেকে ব্যর্থ এবং দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক স্থাপনার অবসান ঘটাব।

ঘণ্টাব্যাপী ভাষণে ট্রাম্প মূলত অভিবাসন নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক আন্দোলন। ৭৫ দিন আগে, আমরা ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করেছি। আমাদের দেশ কখনো এমনটা দেখেনি। আগামীকাল থেকে, আমি ঐতিহাসিক শক্তি প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নেব এবং আমাদের দেশের প্রতিটি সংকটের সমাধান করব।’

ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া, পরিবেশ রক্ষায় নিয়মের কড়াকড়ি কমানো এবং ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমেরিকাকে প্রথমে রাখব, আর কাল থেকেই এর কাজ শুরু হবে। আপনারা আগামীকাল টেলিভিশন দেখে অনেক মজা পাবেন।’

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে এটি ওয়াশিংটনে দেওয়া ট্রাম্পের প্রথম বড় ভাষণ। ওই ভাষণের পর ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত দেড় হাজারের বেশি মানুষকে ক্ষমা করে দেবেন।

সোমবার দুপুরে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘বাইডেন প্রশাসনের প্রতিটি উগ্র ও নির্বোধ নির্বাহী আদেশ’ বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। একটি সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার ট্রাম্প ২০০টির বেশি নির্বাহী পদক্ষেপ নেবেন। আরেকটি সূত্র বলেছে, ট্রাম্প প্রথম যেসব নির্বাহী আদেশ দেবেন, সেগুলোর মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, মাদক চক্রগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দেওয়া, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা এবং ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতি পুনর্বহালের দিকে অগ্রসর হওয়া। ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতির আওতায় মেক্সিকোর নন, এমন আশ্রয় প্রার্থীরা মার্কিন আদালতের তারিখ পেতে সেখানেই অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নত করা, সরকারের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য একটি বিভাগ গঠন করা (ডিপাটমেন্ট অব গর্ভনমেন্ট ইফেসিয়েন্সি-ডিওজিই), সামরিক বাহিনীকে আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া এবং সেনাবাহিনী থেকে বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তি নীতি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেন। ট্রাম্প জনএফ কেনেডি, রবার্ট কেনেডি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশ করারও প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন।

রোববারের বিজয় সমাবেশে ট্রাম্পের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্য ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, এরিক এবং এরিকের স্ত্রী লারা ট্রাম্পও মঞ্চে যোগ দেন। এর আগে ট্রাম্প আরলিংটন জাতীয় সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শন করেন। সেখানে ‘টম্ব অব দ্য আননোন সোলজার’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় তার সঙ্গে ছিলেন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।

রোববারের তুষারপাত এবং প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে সোমবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাইরে করা হয়নি। গত ৪০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্যাপিটলের ভেতরে সরিয়ে নেওয়া হয়। শপথ গ্রহণের দিন সোমবার তাপমাত্রা ছিল প্রায় হিমাঙ্কের ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২৫ হাজার সদস্য এ অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করেন।

 

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article