তৃপ্তি রঞ্জন সেন, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে খুলনার পাইকগাছায় বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) রায় এঁর ১৬৪ তম জন্মোৎসব পালিত হয়েছে। আজ ০২ আগস্ট ২০২৫ রোজ শনিবার সকালে পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নে বিজ্ঞানীর জন্মভিটায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিজ্ঞানী পিসি রায়ের প্রতিকৃতি’তে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তারা বিজ্ঞানীর কর্মময় জীবনের উপর স্মৃতি চারণ করে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন। সরকারী কর্মকর্তা জাকারিয়া এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আকতার হোসেন, পাইকগাছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সমরেশ রায়, সহকারি পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) মোঃ আরিফুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার( ভূমি) মোঃ ইফতেখারুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ রিয়াদ মাহমুদ, উপজেলা বিএনপি’র সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ডাঃ আব্দুল মজিদ। বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গাজী রুহুল আমীন, লেখক জয়ন্ত কুমার ঘোষ, প্রভাষক মোমিন উদ্দীন, রাড়ুলী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ সরকারী কর্মকর্তা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে রাডুলী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা জমিদার হরিশচন্দ্র রায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত রসায়নবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞান শিক্ষক, দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তা, কবি ও সমাজ সংস্কারক ও সমবায় আন্দোলনের পূরোধা।
পিসি রায় ১৮৭৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজ (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ)। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ ক্লাসে। সেখান থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাশ করেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে প্রফুল্লচন্দ্র রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রায় ২৭ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন। অধ্যাপনাকালে তাঁর প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। পিসি রায় বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা। বেঙ্গল কেমিক্যাল ১৯০১ সালে কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। ১৮৯৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তিনি মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন। পিসি রায় ১৯০৯ সালে জন্মভূমি রাড়ুলীতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে পিতার নামে আর, কে, বি, কে, হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কলেজে রুপান্তরিত হয়েছে। তিনি বাগেরহাটে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পি সি রায় কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করে খ্যাতি অর্জন করেন। বিজ্ঞানী পিসি রায় ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন পরলোক গমন করেন। চিরকুমার এ বিজ্ঞানী জীবনের অর্জিত সকল সম্পদ মানব কল্যাণে দান করে গেছেন।