আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। পৌষের আগেই আগ্রহায়নের শুরুতে শীতের হাকডাক বেড়েছে। দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডায় শিশুসহ বয়বৃদ্ধদের জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার ফলে জেলার ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ, শিশু হাসপাতাল ও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর-আউটডোরে প্রতিদিনই শিশু ও বয়বৃদ্ধদের উপচে পড়া ভীড়।
আজ ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ রোজ রোববার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা-জ্বর নিয়ে রোগী ভর্তি আছে ১২০ জন। ১ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৮৫ জন শিশু ও বয়বৃদ্ধ।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তথ্য মতে নভেম্বেরের ১ তারিখ হতে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত সমস্যায় মৃতের সংখ্যা ২ জন।
ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ রাজিয়া সুলতানা বলেন, নভেম্বরের শুরু হতে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকায় শিশুদের পাশা-পশি বয়বৃদ্ধরাও নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্তের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনকে দিন আউটডোরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যারা আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন তাদের ফেরৎ দেওয়া হচ্ছে। আর যে সকল রোগীর অবস্থা গুরুত্বর, তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত বয়বৃদ্ধ ও শিশুসহ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৬৫ জন ও ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৮০ জন রোগীভর্তি হয়েছে।
ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের সেপ্টম্বর, অক্টোবরে শিশুদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কিন্তু নভেম্বর ডিসেম্বরে সংক্রমনের হার আস্তে আস্তে কমে যায়। আবহাওয়ার স্থিতিশীলতার কারনে ঠান্ডাজনিত সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে এসে যায়। আমরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।
শিশুদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে রক্ষার জন্য তিনি আরো বলেন, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। সন্ধার পর বাড়ির বাইরে গেলে শিশুকে মাস্ক পরাতে হবে। শিশুকে কোলে নেয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে দুই হাত ভালো মতো ধুঁয়ে নিতে হবে।
এদিকে ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা হাসপাতের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা জাকির হোসেন জানান, প্রতিবছর শীতের প্রথমে বয়বৃদ্ধদের এ্যাজমা, সর্দি-কাশি, ঠান্ডাজনিত রোগের সমস্যা বৃদ্ধি পায় তবে বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এ সময়ে বয়বৃদ্ধদের সন্ধার পর মোটা কাপড়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ফ্রীজের পানি ও ঠান্ডা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চললে সুস্থ থাকা সম্বভব।
জেলার একমাত্র শিশু হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিশু হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে ৭০ জনের বেশি শিশু। এদের অধিকাংশই ঠান্ডা-জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত।
শিশু হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আলী হাসান ফরিদ (জামিল) বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে শিশুর সুরক্ষায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। শিশুর পোশাক, শোবার ঘর ও খাবার খাওয়ার পাত্রগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।