Wednesday, October 15, 2025

দুর্নীতি, অনিয়ম, অপশাসন দূর করতে আল কুরআনের শাসনের কোন বিকল্প নেই-অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

Must read

 

তৃপ্তি রঞ্জন সেন, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, প্রশাসন ও সরকারের কিছু উপদেষ্টার মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে । তার অভিযোগ, উপদেষ্টাদের কেউ কেউ গোপনে একটি দলের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের ক্ষমতায় আনতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “এর আগে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব হয়েছে, এবার সুশাসনের জন্য বিপ্লব করতে হবে। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এখন ঐক্য তৈরি হয়েছে এই ঐক্য থাকলে বাকিরা বাতিলের খাতায় চলে যাবেও বলে মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তিনি বলেন, ২৪ এর গণ আন্দোলনের ছাত্র-জনতার যুদ্ধ ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আর আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই দ্বিতীয় যুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে পাঠাতে হবে। “জামায়াতে ইসলাম ক্ষমতায় গেলে আমাদের প্রথম কাজ হবে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে এমন ব্যবস্থা চালু করা, যাতে সবার শিক্ষা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয় কাজ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন।” তিনি বলেন, সুবিচার প্রতিষ্ঠায় কুরআনের আইনকে সংসদে পাঠাতে হবে ও কুরআনের ভিত্তিতে সমাজ গঠন করতে হবে। এজন্য তিনি দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার আহবান জানান।

গোলাম পরওয়ার বলেন, নির্বাচনে জয়ী হলে জামায়াত নেতারা কোনো সরকারি প্লট, গাড়ি, বাড়ি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করবেন না বলেও ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও এমন ঘোষণা দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। সাবেক এমপি অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, দেশবাসী অনেক শাসন দেখেছে এবার নতুন কিছু দেখতে চায়। এবার চায় লাঙল দিয়ে ধান চাষ করে নৌকায় করে বাড়ি তোলা হয়েছে এবার অন্তত: দাঁড়িপাল্লা দিয়ে তা’ মেপে বুঝপর করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম, অপশাসন দূর করতে আল কুরআনের শাসনের কোন বিকল্প নেই। তাই দেশের সকল ইসলামী দলের সাথে একটি বোঝাপড়া হয়েছে। সেই জোটের ভিত্তিতেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন করতে হবে। বিগত তিনটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি এবার অন্তত: ভোটদান নিশ্চিত করা হবে সেই প্রত্যাশা জনগণের।

আজ ১১ অক্টোবর ২০২৫ রোজ শনিবার সকালে খুলনার পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠে পাইকগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ঐতিহাসিক ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার এ সব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর মাওলানা সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক ও খুলনা-৬ (পাইকগাছা কয়রা) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন , আগামী নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। তিনি বলেন, অনেকে পিআর পদ্ধতির সমালোচনা করছেন। কিন্তু যারা পিআর বোঝেন না তাদের রাজনীতি করার কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নেই। প্রবাসীদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি এলাকার উন্নয়নে তাদের অবদান রাখার আহবান জানান। এ সময় তিনি কয়রা-পাইকগাছার উন্নয়নে ২০ দফার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে বলেন, জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী জোট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দু’টি উপজেলা নিয়ে সুন্দরবন জেলা গঠনসহ অন্যান্য সব সমস্যার পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দল মনে করেছিল আগের মতো যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে তারা যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় চলে যাবে। এ জন্য ফ্যাসিবাদের আমলে যতনা তাদের নেতাকর্মী খুন হয়েছে তার চেয়ে বেশি অন্তর্কলহে ০৫ আগস্টের পর দলীয় নেতাকর্মী খুন হয়েছে। সুতরাং এ থেকেই মানুষ বুঝে গেছে তারা ক্ষমতায় গেলে দেশের কি অবস্থা হবে। এ জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার বার তাদের ভোট বিপর্যয় ঘটছে। এতে তারা এখন আর ভোটে আসতেও ভয় পাচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর পাইকগাছা উপজেলা সেক্রেটারি মোঃ আলতাফ হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু জার আল গিফারী, মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও গাউসুল আযম হাদী, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট লিয়াকত আলী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম ও অধ্যাপক নূরুজ্জামান মল্লিক, জেলা ইউনিট সদস্য মাওলানা শেখ কামাল হোসেন, কাজী তামজীদ আলম, এডভোকেট আব্দুল মজিদ ও অধ্যাপক আব্দুল মোমিন, পাইকগাছা উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি আহম্মদ আলী, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা বুলবুল আহম্মদ, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল খালেক, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল হান্নান ও মাওলানা আব্দুস সবুর, পৌরসভা আমীর ডা. আসাদুল হক ও সেক্রেটারি মিজানুর রহমান, পাইকগাছা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও পাইকগাছা বাজার কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অমরেশ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা দক্ষিণ থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারিক মাহমুদ শিশির ও উত্তর থানা সভাপতি খালিদ মাহমুদ রেজা, হাফেজ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। উল্লেখ্য দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করেই সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হন। সমাবেশ সকাল ন’টায় শুরু হলেও ভোর থেকে সমাবেশ স্থলে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ মিছিল সহকারে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হন। পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল এবং লোকজন মেইন সড়কেও অবস্থান করে।

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article