Sunday, August 10, 2025

টাকা নিয়ে বিরোধে মাকে হত্যা করে লাশ ফ্রিজে রাখে ছোট ছেলে

Must read

 

দক্ষিন বাংলা ডেস্ক : বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ডাকাত নয়; হাত খরচের টাকা নিয়ে বিরোধে ছোট ছেলে মাদ্রাসাছাত্র সাদ বিন আজিজুর (১৯) তার মা উম্মে সালমা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাশ বাড়ির ডিপ ফ্রিজে রাখে। নিজেকে বাঁচাতে হত্যাকাণ্ডের দায় ডাকাতের ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। তাই কুড়াল দিয়ে ঘরের আলমারিতে আঘাত করে।

র‌্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানির সদস্যরা ১১ নভেম্বর ২০২৪ রোজ সোমবার মধ্য রাতে তাকে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার পাঁচপীর আড়োবাড়ি এলাকায় দাদা রমজান মোল্লার বাড়ি থেকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে সে তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করে।

র‌্যাব কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান আজ ১২ নভেম্বর ২০২৪ রোজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দিয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার দারুস সুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা মসজিদের খতিব আজিজুর রহমান জয়পুরপাড়া এলাকায় আজিজিয়া মঞ্জিলের তৃতীয়তলায় বসবাস করেন। বড় ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় এবং তার সঙ্গে স্ত্রী উম্মে সালমা খাতুন (৫০) ও ছোট ছেলে একই মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাদ বিন আজিজুর থাকেন।

মাদ্রাসাছাত্র সাদ বিন আজিজুর প্রেম করেন। এছাড়া সে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। হাত খরচের টাকার জন্য মায়ের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে টাকা হারিয়ে যেত। সাদ গত ১০ নভেম্বর সকালে মা সালমার কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়। সে তার মাকে হত্যা করে ডাকাতদের কাজ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সাদ নাস্তা না করেই বাড়ির বাহিরে চলে যায়। মাদ্রাসায় না গিয়ে আশপাশে অবস্থান করার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে আসে।

এ সময় মা বঁটি দিয়ে কুমড়া কাটছিলেন। সাদ পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে পেছন থেকে মায়ের নাক ও মুখ চেপে ধরে। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বঁটি দিয়ে সাদের তর্জনী আঙুল কেটে যায়। এরপরও সে দুই হাত দিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ হত্যার ঘটনা ডাকাতি হিসেবে প্রচার করতে ওড়না দিয়ে মায়ের দুই হাত-পা বেঁধে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখে।

ডাকাতির প্রমাণ হিসেবে কুড়াল দিয়ে আলমারিতে কয়েকটি কোপ দেয়। এরপর প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বাহিরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে মা সালমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে বাবা আজিজুর রহমানকে ফোনে ডেকে আনে। পরে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ উম্মে সালমা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, দিনের বেলা সুরক্ষিত বাড়িতে পর্দানশীন গৃহবধূকে হত্যার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘাতক ছেলে সাদকে শনাক্ত করা হয়। ১১ নভেম্বর ২০২৪ রোজ সোমবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার পাঁচপীর আড়োবাড়ি এলাকায় দাদা রমজান মোল্লার বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার ও বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। পরে তাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুপচাঁচিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়।

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে বড় ভাই নাজমুস সাকিব থানায় সাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।

তিনি আরও জানান, সাদকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ডের জন্য আবেদন করা হবে।

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article