Friday, August 8, 2025

চোরাই পথে গরু আমদানি ও চামড়া পাচার রোধে সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবি-পুলিশের কঠোর নির্দেশনা

Must read

 

এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবেশি দেশ থেকে যাতে কোন গবাদি পশু অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সাতক্ষীরায় সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বিজিবি ও পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে। একইসাথে ঈদ পরবর্তী চামড়া পাচার রোধেও সীমান্ত রেখায় কঠোর নজর রাখবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। দেশের গবাদি পশু খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় এবং পাচার রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

সূত্রমতে, সাতক্ষীরায় বিজিবির তিনটি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে ২৭৮ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ সীমান্তের প্রায় ৩০টি চোরা ঘাট দিয়ে মানবপাচার ও চামড়াসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

দেশে সবচেয়ে বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয় ঈদুল আজহায়। এ সময় দেশে বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি করা হয়, যা থেকে সারা বছরের অন্তত ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয়।

আবার এই সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও পাচারকারী সীমান্ত দিয়ে গরু আমদানি করে এবং ভারতে পাচার করে কাঁচা চামড়া।

ঈদের পর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে চামড়া পাচার রোধে তাই সাতক্ষীরার পুরো সীমান্তে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও জেলা পুলিশ। একই সাথে প্রতিবেশি দেশ থেকে একটি গরুও অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করতে পারবে না এজন্য

সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে টহল। সীমান্তের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর হলে এসব সিন্ডিকেটের হোতারা গা-ঢাকা দেয় বলে জানায় সীমান্ত সূত্র।

তবে ঈদুল আজহায় এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা আবারও তৎপর হয়েছে বলে জানিয়েছে সীমান্তের স্থানীয়রা।

সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি সূত্র জানায়, ঈদের আগে গবাদি পশু ও ঈদের পরে পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। চোরাই পথে গরু আমদানি ও চামড়া পাচার প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘চামড়া পাচার রোধে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সীমান্তের সড়কে কোনো চামড়াবাহী যানবাহন ঢুকতে পারবে না। অন্য জেলা থেকেও চামড়াবাহী কোনো যানবাহন সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করতে পারবে না।

তবে জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের সংগৃহীত চামড়া যশোর ও ঢাকার আড়ত এবং ট্যানারিতে নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এ বছর সাতক্ষীরা থেকে চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা প্রায় এক লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা করছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারো সাতক্ষীরার খামারিরা সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন। অবৈধপথে ভারত থেকে গরু আমদানি করা না হলে লাভবান হওয়ার আশা করছেন খামারিরা। সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ১২ হাজার ৮৮৯জন খামারি কোরবানির জন্য গরু প্রস্তুত করেছেন। জেলায় মোট ১ লাখ ২৯ হাজার ৭০৮টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৭৭টি। ফলে অতিরিক্ত ২৯ হাজার ১৩১টি পশু থাকবে, যা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এসএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলায় ৫ হাজার ৩১৭ জন পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে খামার পরিচালনা করছেন। গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সে সঙ্গে প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সে সঙ্গে প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা। এবারের ঈদে খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ঢাকার মধ‍্যে কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। আর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা।

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article